শিরোনাম
Home » সর্বশেষ » ভৈরবের সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

ডিও লেটারে ডিলারের স্বাক্ষর জাল;

ভৈরবের সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

14 / 100 SEO Score

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ডিলারের স্বাক্ষর জাল করে অপর ডিলারকে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) প্রদান করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে।
বিষয়টি জানাজানি হলে ডিলার ও বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সরকারি নথিতে, স্বাক্ষর নকল ও অনিয়ম করে ডিও ইস্যু করা ফৌজদারি আইনে শাস্তিযোগ্য ও দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও নিয়মিতই এই ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে বলে অভিযোগ করা হয়।

লিখিত অভিযোগে জানাযায়, উপজেলার শিমুলকান্দি ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের মো: শফিকুল ইসলাম ওই ইউনিয়নের একজন বৈধ খাদ্য বান্ধব ডিলার।
গত ১৯নভেম্বর, বুধবার খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর ডিলার শফিকুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে তাঁর নামে ২ হাজার ৮৬৫ কেজি চালের ডিও ইস্যু করে দ্বিন ইসলাম নামে অন্য ডিলারকে দেয়া হয়।
এছাড়াও সোহাগ মিয়া নামের আরেকজন খাদ্য বান্ধব ডিলারের স্বাক্ষর জাল করে আরেক জন্য ডিলারকে দেয়া হয় ১হাজার ১৩০ কেজি চালের ডিও (ডেলিভারি অর্ডার)। এবং শামীম নামে একজন ডিলার জেলে থাকলেও তার স্বাক্ষর জাল করেই দেয়া হচ্ছে চাল উত্তোলনের ডিও। এ সবকিছুই করেছেন সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাদ্দাম হোসেন।

জাল স্বাক্ষরের ঘটনাটি অন্য ডিলারদের মধ্যে জানাজানি হলে ভুক্তভোগী ডিলার শফিকুল ইসলাম ও সোহাগ মিয়ার নজরে আসে। পরে ভুক্তভোগীরা কাগজপত্র দেখে নিশ্চিত হন উপজেলা সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাদ্দাম হোসেন তাঁদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে দ্বিন ইসলাম নামে অন্য ডিলারকে ডিও দিয়েছেন। নকল স্বাক্ষরের ডিও নিয়ে ভৈরব বাজারস্থ এসএসডি গোডাউন থেকে চাল ডেলিভারি নেন অন্য একজন ডিলার।
এঘটনায় ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বরাবর লিখিত অভিযোগ করছেন।
ওই লিখিত অভিযোগে ভৈরব উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রুমানা আফরোজ ও সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাদ্দাম হোসেনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা দুই কর্মকর্তা মিলেই এক ডিলারের সই নকল করে অন্য ডিলারকে ডেলিভারি প্রদানের অনুমতি দেন।
এঘটনাটি জানাজানি হলে ডিলার শফিকুল ইসলামকে ম্যানেজ করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা তদবির করেন সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাদ্দাম হোসেন। এঘটনায় গত মঙ্গলবার পৌরসভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক শবনম শারমিন ও ১৪জন খাদ্য বান্ধব ডিলারের উপস্থিততে অভিযুক্ত সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাদ্দাম হোসেন ঘটনাটিকে ‘ভুল-বোঝাবুঝি’ আখ্যা দিয়ে ক্ষমা চান এবং বিতরণকৃত (ডিও) মোট লভ্যাংশের ৫,৭৬৫/- টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বাস দেন। এবং পরদিন বুধবার উপজেলা সংলগ্ন হাজী হোটেলে গিয়ে লভ্যাংশের টাকা ফেরত দেন অভিযুক্ত সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক। ওইদিন হাজী হোটেলে দুইজন সাংবাদিক উপস্থিত হয়ে এবিষয়ে তথ্য জানার চেষ্টা করলে সাদ্দাম হোসেন সাংবাদিক ম্যানেজ করার জন্য এক সাংবাদিকের পকেটে ৪হাজার টাকা গুজে দিয়ে চলে যান। পরে রাতেই ওই টাকা সাদ্দাম হোসেনের অফিসে গিয়ে ফেরত দেয়া হয়।

সাংবাদিক শামীম আহমেদ জানান, এঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ডিলারদেরসহ হাজী হোটেল গিয়েছেন খাদ্য কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন। এমন সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক দুইজন সাংবাদিক ওইখানে যায়। যাওয়ার পর সাদ্দাম হোসেনের কাছে এবিষয়ে জানতে চাই। সে জানায় বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে। একপর্যায়ে আমার সহকর্মীর পকেটে ৪হাজার টাকা গুজে দিয়ে চলে যায়। পরে আমি টাকার বিষয়ে জানতে পেরে ওই টাকা তাঁর কাছে ফেরত পাঠায়।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী ডিলার শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনা সত্য। আমার স্বাক্ষর নকল করে অন্য ডিলারকে ডিও দিয়েছেন সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাদ্দাম হোসেন। খাদ্য কর্মকর্তার সঙ্গে মিলেই এই অপকর্ম করেছে। আমি তাদের দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগও লিখেছি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বরাবর। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিনের মাধ্যমে পৌরসভায় বসে বিষয়টি মীমাংসা হয়। এখনে ১৪জন ডিলার উপস্থিত ছিলেন। আরও কয়েকজনের অভিযোগ ছিলো তারা পরে তাদের সত্যটা বলেনি। আমি সত্যটাই বলেছি। তিনি বলেন, শামীম নামে একজন ডিলার জেলে আছে তার স্বাক্ষর জালিয়াতি হয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করায় আমার সাথে রাগ দেখিয়েছে। পরে ওই ডিও’র লাভের অংশ ৫৭৬৫টাকা ফেরত দেন খাদ্য কর্মকর্তা। ভুক্তভোগী ডিলার সোহাগ মিয়া বলেন, আমার স্বাক্ষর জাল করেও ১হাজার ১৩০ কেজি চালের ডিও দিয়েছেন সাদ্দাম হোসেন। পরে ক্ষমা চাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আর কথা বলিনি।

এদিকে অভিযুক্ত সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাদ্দাম হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। জাল স্বাক্ষর ঘটনা তিনি অবগত নন। এমনকি জরিমানা হিসেবে ডিলারকে ৫৭৬৫ টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়টিও চেপে যান। এবিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রুমানা আফরোজ বলেন, ঘটনার দিন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ভৈরবে ডিজিটে আসায় কয়েকটি খালি ডেলিভারি অর্ডারে (ডিও) আগাম স্বাক্ষর করেছিলাম। ডিও নিতে হলে আগে থেকেই ডিলারের স্বাক্ষর দেওয়া প্রয়োজন হয়। ১৯ নভেম্বরের দুটি ডিলারের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত হলেও কেউ এখনো লিখিত অভিযোগ জমা দেয়নি। খাদ্য বিভাগের ডিলারদের চাল উত্তোলন নিয়ে যদি কেউ অপব্যবহার করে থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, অফিসার সাদ্দাম কোনো অনিয়ম করে থাকলে সেটিও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Author

সত্য খবর, সব সময়ই
নিউজ টুডে বিডি টুয়েন্টিফোর ডটকম